পরিপুর্ণ নিউজ ডেস্ক — ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে বলে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার সকালে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে। পাঁচ দফা এই পরিকল্পনা “হামাসকে পরাজিত” করা এবং “যুদ্ধের সমাপ্তি” লক্ষ্য করে গৃহীত হয়েছে।
যদিও নেতানিয়াহু পূর্বে পুরো গাজা উপত্যকা দখলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, অনুমোদিত পরিকল্পনায় শুধু গাজা সিটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পাঁচটি মূল লক্ষ্য
পরিকল্পনার পাঁচটি মূল লক্ষ্য হলো —
- হামাসকে নিরস্ত্র করা
- সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনা
- গাজা উপত্যকা নিরস্ত্রীকরণ
- অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেওয়া
- হামাস ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বাইরে একটি বিকল্প বেসামরিক প্রশাসন গঠন
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (IDF) জানিয়েছে, “মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি গাজা সিটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তুতি” চলছে।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ও সমালোচনা
জাতিসংঘ (UN) সতর্ক করেছে, গাজা সিটির পূর্ণ সামরিক দখল ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক এবং গাজায় থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের জন্য “বিপর্যয়কর পরিণতি” বয়ে আনতে পারে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার পরিকল্পনাটিকে “ভুল সিদ্ধান্ত” আখ্যা দিয়ে ইসরায়েলকে পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড ও তুরস্কসহ একাধিক দেশও এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভল্কার টার্ক সতর্ক করে বলেছেন, “এই পদক্ষেপ আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি, হত্যাকাণ্ড, অমানবিক কষ্ট ও ধ্বংস ডেকে আনবে।”
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিরোধিতা
ইসরায়েলের বিরোধীদলীয় নেতা ইয়াইর লাপিদ পরিকল্পনাটিকে “বিপর্যয়” বলে উল্লেখ করেছেন এবং দাবি করেছেন, ডানপন্থী মন্ত্রী ইটামার বেন-গভির ও বেজালেল স্মোটরিচ নেতানিয়াহুকে এমন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করেছেন যা “হামাস চেয়েছিল”।
পরিকল্পনার সম্ভাব্য বাস্তবায়ন
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, প্রথম ধাপে গাজা সিটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়া হবে এবং প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দাকে দক্ষিণে সরিয়ে নেওয়া হবে। এরপর শরণার্থী শিবির ও জিম্মি অবস্থানসমূহে অভিযান চালানো হবে। দ্বিতীয় ধাপে কয়েক সপ্তাহ পর মানবিক সহায়তা বৃদ্ধির সাথে আরও সামরিক অভিযান চলবে।
মানবিক সংকট ও সমালোচিত সহায়তা ব্যবস্থা
বর্তমানে ইসরায়েল গাজার প্রায় তিন-চতুর্থাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। জাতিসংঘের হিসাবে ৮৭% এলাকা হয় সামরিকীকৃত নয়তো সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের অধীনে। অধিকাংশ ফিলিস্তিনি একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর ত্রাণ কার্যক্রম নিয়ে তীব্র সমালোচনা চলছে। জাতিসংঘ ও একাধিক ত্রাণ সংস্থা অভিযোগ করেছে, এই বিতরণকেন্দ্রগুলো বিশৃঙ্খল, ঝুঁকিপূর্ণ এবং বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি বাহিনী সাধারণ নাগরিককে লক্ষ্যবস্তু বানানোর অভিযোগ অস্বীকার করলেও, ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (MSF) জানিয়েছে, এই সহিংসতা “পদ্ধতিগত ও পরিকল্পিত”।
গাজায় চরম মানবিক বিপর্যয়
জাতিসংঘের খাদ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, গাজার অধিকাংশ অঞ্চল কার্যত দুর্ভিক্ষে আছে। ইসরায়েলের কড়া পণ্য ও সহায়তা প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, জুলাই মাসে ৫ বছরের নিচে প্রায় ১২,০০০ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে — যা চলমান যুদ্ধের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি।
লিখেছেন: পরিপুর্ণ নিউজ টিম
www.poripurno.com