বিচারপতি মানিকের ‘রাস্তার আদালত’ ও এক আইজিপি’র আত্মত্যাগ: স্মৃতির পাতায় ২০০৩

🖊️ লিখেছেন: Mahbub Osmane | সূত্র: Ansar Uddin Khan Pathan
২০০৩ সাল। ঢাকার ট্রাফিক বিভাগে তখন দায়িত্বশীল মাত্র দুইজন ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি)—নর্থ ও সাউথ। উত্তরের দায়িত্বে ছিলেন আনসার উদ্দিন খান পাঠান। প্রতিদিন সকাল ৭টায় তিনি রমনা পুলিশ কমপ্লেক্সের সরকারি বাসা থেকে বেরিয়ে মোহাম্মদপুর অফিসে যাওয়ার আগে পুরো উত্তর ঢাকার ট্রাফিক তদারকি করতেন। এমনই এক সকালের ব্যতিক্রম ঘটেছিল ফার্মগেট মোড়ে।
ফার্মগেট ট্রাফিক অফিসার ওবায়েদের একটি ফোন কলে শুরু হয় ঘটনা। তিনি জানালেন, একজন হাইকোর্ট বিচারপতি রাস্তায় দাঁড়িয়ে পুলিশ সদস্যদের তীব্র ভর্ৎসনা করছেন, কারণ তারা তার গাড়িকে স্যালুট করেননি। এমনকি তিনি রাস্তাতেই কোর্ট বসিয়ে তাদের সাজা দেয়ার ঘোষণা দেন। সেই বিচারপতির নাম ছিল বিচারপতি মানিক।
■ ঘটনাটি কীভাবে শুরু?
বিচারপতি মানিক একটি ছোট ফ্ল্যাগ লাগানো কালো গাড়িতে ক্যান্টনমেন্ট থেকে হাইকোর্টের দিকে যাচ্ছিলেন। ট্রাফিকের ব্যস্ত সময়ে তিনজন সার্জেন্ট তখন সিগন্যাল দিচ্ছিলেন। কেউই তাঁর গাড়িকে স্যালুট না করায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি থামান, সার্জেন্টদের ডেকে ভর্ৎসনা করেন এবং ইন্সপেক্টর ওবায়েদ সহ সকলকে তার সামনে হাজির করতে বলেন। এতে তৈরি হয় ভয়াবহ যানজট। পুলিশ সদস্যরা বারবার ক্ষমা চাইলেও বিচারপতি তা মেনে নেননি।
■ ‘রাস্তার আদালত’ থেকে হাইকোর্টে সমন
ঘটনার দিন বিকেলেই হাইকোর্ট থেকে সমন আসে, যাতে ওই তিন সার্জেন্ট ও ইন্সপেক্টরকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারপতি মানিক তাদের প্রত্যেককে ২০০ টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের জেলের আদেশ দেন। ইন্সপেক্টরকে দেওয়া হয় সতর্কতামূলক বন্ড।
পরদিন ডেপুটি কমিশনার আনসার উদ্দিন খান পাঠান নিজেও হাইকোর্টে হাজির হন। সেখানে আদালতের উৎসুক ভিড়, এটর্নি জেনারেলের সহানুভূতি ও একজন আইনজীবীর পরামর্শে তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করে বিষয়টি সমাধান করেন।
■ আইজিপি শহুদুল হককে ছয় মাসের জেলের রায়
তবে ঘটনার এখানেই ইতি নয়। আদালত তখন আইজিপি শহুদুল হকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করে। আনসার উদ্দিনসহ সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে পরামর্শ করে শহুদুল হক বিচারপতির দাবির যুক্তিসংগততা না দেখে ক্ষমা না চেয়ে যুক্তিপূর্ণ ব্যাখ্যা জমা দেন। বিচারপতি মানিক তাতে অসন্তুষ্ট হয়ে আইজিপিকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।
তৎকালীন আইজিপি শহুদুল হক ছিলেন একজন সৎ, দৃঢ়চেতা ও সাহসী কর্মকর্তা। জিয়াউর রহমানের আমলে সেনাবাহিনী থেকে পুলিশে যোগ দিয়েছিলেন, পরে ২০০১ সালে বিএনপি সরকার তাঁকে আইজিপি পদে ফিরিয়ে আনে। আদালতের আদেশে তিনি অপমানিত হয়ে আইজিপি পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যা গৃহীত হয়।
■ বিচারপতি মানিক ও বিতর্কিত অতীত
বিচারপতি মানিক একসময় ছিলেন আলোচিত ও বিতর্কিত ব্যক্তি। তার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ও আচরণ বহুবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ, টিভি টকশোতে অদ্ভুত ভাষা প্রয়োগ ও রাস্তায় আদালত বসানোর মত অস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড জনসাধারণের মনে বিস্ময় তৈরি করেছিল।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আনসার উদ্দিন খান পাঠান মনে করিয়ে দেন ১৯৭১ সালের সেই গান— “বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা, আজ জেগেছে এই জনতা।”
সেই ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ টেনে তিনি প্রশ্ন রাখেন— এই কি আমাদের কাঙ্ক্ষিত বিচার ব্যবস্থা?
■ উপসংহার
ঘটনার ২০ বছর পরও এটি বাংলাদেশের প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সম্পর্কের এক যুগান্তকারী উদাহরণ হয়ে রয়ে গেছে। একজন বিচক্ষণ, ন্যায়পরায়ণ পুলিশ কর্মকর্তার আত্মত্যাগ ও একজন বিতর্কিত বিচারপতির অসহিষ্ণু আচরণ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় হয়ে থাকবে।
✒️ লেখক: Mahbub Osmane
📅 প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল ২০২৫
🔗 https://poripurno.com
সঠিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের সফলতা নিশ্চিত করুন!
মাহবুবওসমানী.কম দিচ্ছে আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট, গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং, এবং প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট – সবকিছু একসাথে, ইংশাআল্লাহ্!
✅ ১৪+ বছরের অভিজ্ঞতা – গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং
✅ ৮০০+ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট – আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট
✅ প্রমাণিত ফলাফল, সর্বোচ্চ ROI – প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
📩 আজই যোগাযোগ ( wa.me/+966549485900 or wa.me/+8801716988953 ) করুন এবং আপনার ব্যবসার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিন!
🌍 ভিজিট করুন: MahbubOsmane.com