ঈদ মিছিল: নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা নাকি ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ?
ঈদ মিছিল: নতুন সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা নাকি ঐতিহ্যের পুনর্জাগরণ?
ঢাকা, ৩১ মার্চ ২০২৫ – দীর্ঘদিন পর ঢাকার রাজপথে ঈদ উৎসবের নতুন এক মাত্রা যোগ হয়েছে ঈদ মিছিলের মাধ্যমে। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এই আয়োজনকে শুধুমাত্র আনন্দ উদযাপন হিসেবে দেখলে ভুল হবে। বরং এটি একটি ঐতিহাসিক সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত বহন করছে, যেখানে ‘সুলতানী বাংলাহ’ পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন নানাভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঈদ মিছিলের অন্যতম প্রাণ ছিলেন আসিফ মাহমুদ। রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ বা সেক্যুলার হিসেবে পরিচিত হলেও, তিনি কেন বারবার সুলতানী আমলের প্রসঙ্গ তুলছিলেন? কেনই বা ‘সুলতানী বাংলাহ’কে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করছিলেন? মূল কারণ নিহিত আছে দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও প্রতিরোধের ইতিহাসে।
ঐতিহ্য বনাম আধিপত্য: এক দীর্ঘ সাংস্কৃতিক লড়াই
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চায় বহিরাগত প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান। সেন আমল থেকে শুরু করে ব্রিটিশ শাসনকাল এবং পরবর্তীতে ভারতীয় সাংস্কৃতিক আধিপত্য—এসবের বিরুদ্ধে একধরনের প্রতিরোধ তৈরি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আবুল মনসুর আহমদ থেকে শুরু করে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ, নজরুল, আব্বাস উদ্দীন, এবং পরবর্তীতে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, হুমায়ূন আহমেদ ও আল মাহমুদের লেখনীতে এর ছাপ স্পষ্টভাবে পাওয়া যায়।
বর্তমান সময়ে সেই সাংস্কৃতিক লড়াই এক নতুন রূপ নিচ্ছে। বাঙালি সংস্কৃতি বনাম মুসলিম সংস্কৃতির দ্বন্দ্ব তৈরি করে একপক্ষীয় আধিপত্য চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরে চলেছে, ঈদ মিছিল তারই বিপরীতে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রতিচিত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে।
ঈদ মিছিল: কী বার্তা দিল?
ঈদ মিছিলে একাধিক প্রতীকী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে, যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা দুটোই হয়েছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো:
✅ ঐতিহ্যবাহী প্রতীকগুলোর ব্যবহার – মিছিলে ‘সুলতানী বাংলাহ’ পুনর্জাগরণের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট। শাহী বাংলার বাঘ, সিংহ এবং হাতি ব্যবহার করার পরিকল্পনা থাকলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে হাতি ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। তবে ভবিষ্যতে এসব ঐতিহ্যবাহী প্রাণীকে প্রতীক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে বিচার বিভাগের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে।
✅ লাইভ পারফরম্যান্সের গুরুত্ব – মিছিলে প্রতীকী মূর্তি বা পুতুল ব্যবহারের বদলে লাইভ পারফরম্যান্স এবং বিমূর্ত শিল্পকর্ম ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে।
✅ মিথোলজিক্যাল প্রতীক ‘শাদাভার’ – সাদা ইউনিকর্নের অনুপ্রেরণা মধ্যযুগীয় মুসলিম মনীষী আল কাজউইনির রচনার এক বিশেষ প্রাণী ‘শাদাভার’ বা ‘আরাশ’। কিছু বিতর্ক থাকলেও এটি সমকামিতার প্রচার নয় বরং মুসলিম ঐতিহ্য ও মিথের অংশ হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে।
✅ নতুন সাংস্কৃতিক ধারা প্রতিষ্ঠার সূচনা – ঢাকা শহর নবাবী আমলের পর থেকে ঈদ উৎসবকে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপনের ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছিল। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হলেও সাংস্কৃতিকভাবে বাংলাদেশে ভারতীয় ধর্মনিরপেক্ষতাই মূলত প্রচলিত ছিল। কিন্তু ক্ষমতায় আসার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে সাংস্কৃতিক সংস্কার শুরু করে সরকার এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
সমালোচনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
যদিও ঈদ মিছিলের আয়োজনটি অভূতপূর্ব ছিল, কিছু সমালোচনা উঠেছে:
1️⃣ মোল্লা নাসিরুদ্দিন হোজার চেহারা – ড. ইউনুস ও শফিকুর রহমানের মুখাবয়বের সংমিশ্রণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এটি কার পরিকল্পনা ছিল, তা তদন্ত করা প্রয়োজন।
2️⃣ প্রতীকী উপস্থাপনায় আরও সূক্ষ্মতা প্রয়োজন – মূর্তি বা পুতুলের পরিবর্তে বিমূর্ত শিল্প এবং লাইভ পারফরম্যান্সের দিকে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
3️⃣ ঐতিহ্যগত প্রাণী প্রতীকের যথাযথ ব্যবহার – বাঘ, সিংহ, হাতির মতো ঐতিহ্যগত প্রতীকগুলোকে সাংস্কৃতিকভাবে ব্যবহারের আইনগত বাধা দূর করতে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
উপসংহার
ঈদ মিছিল শুধু একটি উৎসবের প্রকাশ নয়, এটি দীর্ঘদিনের সাংস্কৃতিক দাসত্ব থেকে মুক্তির এক সূচনা। যারা গত ১৫ বছর ধরে সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে গেছেন, তাদের পরিশ্রম আজ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে এই আয়োজন আরও পরিশীলিত হবে এবং বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধিত্ব করবে ইনশাআল্লাহ।
সংবাদটি লিখেছেন: মাহবুব ওসমানী
প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৫
সূত্র: news.mahbubosmane.com
📢 পাঠকদের মতামত দিন: আপনি ঈদ মিছিল সম্পর্কে কী ভাবেন? মন্তব্য করে জানান!
সঠিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের সফলতা নিশ্চিত করুন!
মাহবুবওসমানী.কম দিচ্ছে আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট, গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং, এবং প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট – সবকিছু একসাথে, ইংশাআল্লাহ্!
✅ ১৪+ বছরের অভিজ্ঞতা – গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং
✅ ৮০০+ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট – আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট
✅ প্রমাণিত ফলাফল, সর্বোচ্চ ROI – প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
📩 আজই যোগাযোগ করুন এবং আপনার ব্যবসার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিন!
🌍 ভিজিট করুন: MahbubOsmane.com