কাওমী মাদ্রাসায় সংস্কারের দাবি: রাষ্ট্রগঠনে আলেমদের অংশগ্রহণ জরুরি।
বাংলাদেশের কাওমী মাদ্রাসাগুলো ইসলামি শিক্ষার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু। যুগের পর যুগ এসব মাদ্রাসা থেকে হাজারো আলেম তৈরি হয়েছে, যারা ধর্মীয় ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে: কেন কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নেই? কেন তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, আইনজীবী বা ডাক্তার হচ্ছেন না?
ডা. ইসমাইল আজহারী, একজন কাওমী শিক্ষার্থী থেকে ডাক্তার, তার অভিজ্ঞতার আলোকে এই বিষয়টি সামনে এনেছেন। তিনি বলেছেন, “কাওমী মাদ্রাসার ছাত্ররা যদি রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করতো, তাহলে প্রশাসন থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীতে ইসলামি নৈতিকতা বজায় থাকতো এবং দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যেত।”
কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি স্বীকৃতির সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার কাওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরা হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তবে এতে একটি বড় সমস্যা রয়ে গেছে—এই স্বীকৃতি কেবল মাস্টার্স পর্যায়ের জন্য, কিন্তু এসএসসি (SSC), এইচএসসি (HSC) বা অনার্স পর্যায়ে কোনো স্বীকৃতি নেই।
এতে কী সমস্যা হচ্ছে?
- কাওমী শিক্ষার্থীরা দাওরা হাদিস শেষ করার পর সরাসরি মাস্টার্স ডিগ্রি পেলেও তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না।
- সরকারি চাকরির বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় (BCS, Judicial, Police, Army, Navy) অংশ নিতে পারছে না।
- চিকিৎসা, প্রকৌশল বা অন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না।
- রাষ্ট্রের মূলধারায় প্রবেশ করতে না পারায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে ইসলামি নৈতিকতা দূরে থাকছে।
ডা. ইসমাইল আজহারীর মতে, “যদি কাওমী শিক্ষার্থীদের HSC সমমানের স্বীকৃতি থাকতো, তাহলে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারতো এবং রাষ্ট্রের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারতো।”
কাওমী বোর্ডের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি: মূলধারায় প্রবেশে বাধা
অনেক কাওমী আলেম মনে করেন, যদি শিক্ষার্থীদের এসএসসি বা এইচএসসি সমমানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে তারা মাদ্রাসা ছেড়ে সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাবে, ফলে কাওমী মাদ্রাসাগুলোতে শিক্ষার্থী কমে যাবে। এই ধারণা ভুল বলে মনে করেন ডা. ইসমাইল আজহারী। তিনি বলেন, “একই ক্লাসে ২০ জন শিক্ষার্থী থাকলে হয়তো ১০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে, কিন্তু বাকি ১০ জন আলেম হয়ে যাবে। এতে কাওমীর মর্যাদা কমবে না, বরং বাড়বে।”
রাষ্ট্রযন্ত্রে কাওমী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্তি কেন জরুরি?
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩ লাখ পুলিশ সদস্য রয়েছে, যারা সাধারণ স্কুল-কলেজ থেকে এসেছেন। কিন্তু কল্পনা করুন, যদি কোরআন-হাদিস জানা সৎ ও নীতিবান কাওমী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতো, তাহলে দুর্নীতি কতটা কমে যেত!
একইভাবে, সেনাবাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগেও যদি ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিতরা আসতে পারতো, তাহলে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ইসলামের নৈতিক শিক্ষা প্রতিফলিত হতো।
ডা. ইসমাইল আজহারী বলেন, “আমি কাওমী মাদ্রাসায় পড়েছি, পরে স্কুল-কলেজ থেকে পুনরায় এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছি এবং ডাক্তার হয়েছি। এখন আমি কোরআন শিক্ষার পাশাপাশি ডাক্তারদের পেশাগত উন্নয়ন নিয়ে কাজ করছি।” তিনি CCR Medical Academy ও CCR Quran Academy প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে ইতিমধ্যে ৮-১০ হাজার ডাক্তার অংশগ্রহণ করেছেন এবং ৫০০+ ডাক্তার কোরআন শিখেছেন।
কাওমী মাদ্রাসায় সংস্কার: এখনই সময় পরিবর্তনের
কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি—
- SSC ও HSC সমমানের স্বীকৃতি: দাওরা হাদিস মাস্টার্স স্বীকৃতির পাশাপাশি কাওমী মাদ্রাসার অন্যান্য স্তরগুলোর জন্যও স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।
- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুযোগ: কাওমী শিক্ষার্থীদের যেন মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রশাসনিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।
- পেশাগত শিক্ষার ব্যবস্থা: শুধু ইমাম-মুয়াজ্জিন তৈরি না করে, তাদের জন্য আইন, চিকিৎসা, প্রশাসন ও অন্যান্য পেশায় প্রবেশের পথ খুলে দিতে হবে।
- আলেমদের মানসিকতার পরিবর্তন: কাওমী বোর্ডের আলেমদের বুঝতে হবে যে, রাষ্ট্রযন্ত্রে কাওমী শিক্ষার্থীদের প্রবেশ কাওমী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি নয়, বরং এটি ইসলামের প্রসারে সহায়ক হবে।
শেষ কথা
কাওমী শিক্ষার্থীরা শুধু মসজিদ-মাদ্রাসার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে রাষ্ট্র কখনো ইসলামি নৈতিকতা ও মূল্যবোধের সুবিধা পাবে না। যদি কাওমী শিক্ষিতরা প্রশাসন, আইন, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তাহলে রাষ্ট্রের দুর্নীতি কমে যাবে এবং ইসলামিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হবে।
ডা. ইসমাইল আজহারীর মতো আরও কাওমী শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের মূলধারায় যুক্ত হওয়া জরুরি। কাওমী মাদ্রাসার সংস্কার এখন সময়ের দাবি। যদি আমরা এখনই উদ্যোগ না নেই, তাহলে ভবিষ্যতেও কাওমীর শিক্ষার্থীরা মূলধারার বাইরে থেকে যাবে, যা দেশের জন্যও ক্ষতিকর।
লেখক:
ডা. ইসমাইল আজহারী
- MBBS, MRCP Part-1 (London UK)
- SMLE (KSA)
- Masters in Hadith: Hathazari Arabic University
- Faculty of Islamic Science: Al Azhar University
- Founder: CCR Medical Academy & CCR Quran Academy
আপনার মতামত কী? কাওমী মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রের মূলধারায় আনতে কি সংস্কার প্রয়োজন? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না!
সঠিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের সফলতা নিশ্চিত করুন!
মাহবুবওসমানী.কম দিচ্ছে আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট, গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং, এবং প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট – সবকিছু একসাথে, ইংশাআল্লাহ্!
✅ ১৪+ বছরের অভিজ্ঞতা – গ্যারান্টেড SEO র্যাঙ্কিং
✅ ৮০০+ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট – আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট
✅ প্রমাণিত ফলাফল, সর্বোচ্চ ROI – প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট
📩 আজই যোগাযোগ করুন এবং আপনার ব্যবসার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিন!
🌍 ভিজিট করুন: MahbubOsmane.com