BangladeshBusiness

বাংলাদেশি মুশতাক শাকিল আহমেদ: মাইক্রোসফটের বিশ্বব্যাপী সাপোর্ট বিভাগের জেনারেল ম্যানেজার, যাকে আমরা চিনি না!

 

রিপোর্টার: মাহবুব ওসমানী | প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০২৫

একজন বাংলাদেশি, যিনি মাইক্রোসফটের মতো বিশ্ব প্রযুক্তি জায়ান্টের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন, অথচ আমরা অনেকেই তার নাম জানি না। তিনি মুশতাক শাকিল আহমেদ — বর্তমানে মাইক্রোসফট সাপোর্টের ওয়ার্ল্ডওয়াইড জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ, সারা বিশ্বের লাখ লাখ মাইক্রোসফট সাপোর্ট ইঞ্জিনিয়ারের প্রধান হচ্ছেন এই ভদ্রলোক।

তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, গুগলের ডিস্টিংগুইশড ইঞ্জিনিয়ার জাহিদ সাবুর ভাইয়ের মতোন দেশব্যাপী পরিচিতি তার হয়নি। এর পেছনে অবশ্যই তার প্রচার বিমুখ মনোভাব কাজ করেছে। কিন্তু তার অবদান এবং অবস্থান কোনো অংশেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

একজন প্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে তার অবদানের একটি ছোট উদাহরণ হলো, চীনের সাংহাইয়ে মাইক্রোসফট সাপোর্ট সেন্টারে বাংলাদেশ থেকে ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ। এক বাংলাদেশি তরুণ ভাগ্যক্রমে সে চাকরি পেয়েছিলেন, আর তার ভাষ্যমতে, পুরো সুযোগটাই তৈরি হয়েছিল মুশতাক শাকিল আহমেদের এক কথায়! শুধু তাই নয়, চীন গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে শতাধিক ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ করেছে মাইক্রোসফট সাপোর্টে — এর নেপথ্যেও ছিলেন এই নীরব দেশপ্রেমিক।

বাংলাদেশে মাইক্রোসফট সাপোর্ট সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ

গত কয়েক বছর ধরেই কিছু আইটি পেশাজীবী এবং কর্পোরেট এক্সিকিউটিভ মিলে চেষ্টা করছিলেন বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের সাপোর্ট বিজনেস আনার। তাদের অন্যতম ছিলেন গ্রামীণফোনের সাবেক হেড অব আইটি এবং এয়ারটেলের সাবেক সিআইও লুৎফর রহমান ভাই। তাদের যৌথ প্রচেষ্টায় মুশতাক শাকিল আহমেদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হয়েছিল এবং টিমস মিটিংয়ে একাধিকবার আলোচনাও হয়।

মিটিংয়ের সময় একটি মজার সমাপতন জানা যায় — লুৎফর ভাইয়ের শ্যালক এবং শাকিল আহমেদ একই দিনে মাইক্রোসফটে জয়েন করেছিলেন, ফলে তাদের মধ্যে একটি পুরনো বন্ধুত্বের সম্পর্কও ছিল।

তাহলে কেন হলো না?

তিনটি ভার্চুয়াল মিটিংয়ের পর মুশতাক শাকিল আহমেদ যে তথ্যগুলো শেয়ার করেন, তা সত্যিই চিন্তার বিষয়। তিনি জানান, ২০১৫ সালের পর মাইক্রোসফট কমপ্লায়েন্স টিম বাংলাদেশে সাপোর্ট সেন্টার খোলার সম্ভাব্যতা যাচাই করতে সরেজমিনে আসে। কিন্তু রিপোর্টে দুটি নেতিবাচক মন্তব্য উঠে আসে:

  1. ঢাকায় টাইমলি অফিসে পৌঁছানো সম্ভব না — ঢাকা অলমোস্ট অ্যা ডেড সিটি!

  2. বাংলাদেশে নেই পর্যাপ্ত ইন্টারনেট এবং রয়েছে বিদ্যুৎ সমস্যা।

যদিও বাংলাদেশে ভালো মানের ইন্টারনেট সংযোগ আছে, মাইক্রোসফটের প্রয়োজন ছিল নিরবিচ্ছিন্ন ও প্রাইভেট কানেক্টিভিটি — যাকে বলা হয় MPLS সার্ভিস। আর তাদের প্রয়োজনীয় ব্যান্ডউইথ ছিল প্রায় ৫০ জিবিপিএস, যেটা বর্তমান বাংলাদেশের আইটি অবকাঠামোর জন্য ব্যয়সাধ্য এবং প্রায় অসম্ভব এক চাহিদা।

তবে এখানেই থেমে থাকেননি শাকিল আহমেদ। তিনি বাংলাদেশের সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি তুলে ধরেন। এক পর্যায়ে তিনি ICT মন্ত্রী পলককে আমন্ত্রণ জানান মাইক্রোসফটের হেডকোয়ার্টারে। সেখানে তিনি সিলিকন ভ্যালির আদলে একটি আন্তর্জাতিক মানের আইটি পার্ক নির্মাণ ও টেক জায়ান্টদের ইনভাইট করার প্রস্তাব দেন।

পলকের জবাব এবং হতাশা

তবে দুঃখজনকভাবে মন্ত্রী পলক সেই বৈঠকে বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সারদের বাৎসরিক ৩ মিলিয়ন ডলারের ইনকামের গল্প বলেন এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা ৫ মিলিয়ন জানান। যেখানে শাকিল আহমেদ আলোচনা করছিলেন বিলিয়ন ডলারের প্রযুক্তি ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে, সেখানে এই ধরনের উদাহরণ তাকে ভীষণ হতাশ করে। তিনি স্পষ্টভাবেই মন্তব্য করেন, “গভেট অ্যান্ড ওর্থল্যাস!” — যা তার হতাশার তীব্রতা স্পষ্ট করে।

শেষ পর্যন্ত সুযোগ পেলো নাইজেরিয়া

অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মাইক্রোসফট সাপোর্ট বিজনেস চলে যায় নাইজেরিয়ায়। আজ সেই দেশ বিলিয়ন ডলার রেভিনিউ অর্জন করছে এই ব্যবসা থেকে। সেখানে হাজার হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আমাদের চেয়ে পিছিয়ে থাকা দেশ হয়েও, তারা তৈরি হয়েছে — আর আমরা সম্ভাবনার দুয়ার বন্ধ রেখেছি।

ভারতের সাফল্য থেকে শেখার আছে অনেক কিছু

ভারতের আইটি খাতের বিশাল অংশ জুড়ে আছে আইটি সাপোর্ট সেবা। বিশ্বের নানা প্রান্তের কোম্পানির জন্য সাপোর্ট সেবা দিয়ে ভারত গড়ে তুলেছে ট্রিলিয়ন ডলারের আইটি ইন্ডাস্ট্রি। আর আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৫০,০০০ আইটি গ্র্যাজুয়েট বের হলেও, তারা যথাযথভাবে কাজে লাগতে পারছে না। অনেকেই বাধ্য হয়ে চাকরির অভাবে অন্য পেশায় ঝুঁকছে।

আশার আলো ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ ভাই

তবে এই অন্ধকারে আশার আলো হচ্ছেন ফাইজ় তাইয়েব আহমেদ ভাই — যিনি বর্তমানে ICT মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে থাকা একজন প্রকৃত আইটি ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষ। তার মতোন দক্ষ পেশাজীবীর হাত ধরে যদি সত্যিকার অর্থে প্র্যাকটিক্যাল এবং ভিশনারি পরিকল্পনা নেওয়া হয়, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতে মুশতাক শাকিল আহমেদের স্বপ্ন সফল হতে পারে।

উপসংহার

আমাদের দরকার সাহসী সিদ্ধান্ত, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, এবং তরুণদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের আইটি সেক্টর গড়ে তোলা। শুধু ফ্রিল্যান্সিং নয়, দরকার কর্পোরেট লেভেলের কাজ — যা বিলিয়ন ডলার ইনকাম করতে পারে দেশের জন্য। এই সুযোগ যদি এখন কাজে না লাগানো হয়, তাহলে হয়তো ভবিষ্যতের ইতিহাসে আবারও আমরা “হারানো সুযোগের দেশ” নামেই পরিচিত হবো।


✍️ লেখক: মাহবুব ওসমানী
🌐 সূত্র: ফেইসবুক পোস্ট
📢 নিউজ সাইট: https://poripurno.com

সঠিক মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনার বিজনেসের সফলতা নিশ্চিত করুন! 

মাহবুবওসমানী.কম দিচ্ছে আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট, গ্যারান্টেড SEO র‍্যাঙ্কিং, এবং প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট – সবকিছু একসাথে, ইংশাআল্লাহ্‌!

১৪+ বছরের অভিজ্ঞতা – গ্যারান্টেড SEO র‍্যাঙ্কিং
৮০০+ সন্তুষ্ট ক্লায়েন্ট – আনলিমিটেড ফেসবুক অ্যাড ক্রেডিট
প্রমাণিত ফলাফল, সর্বোচ্চ ROI – প্রফেশনাল ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

📩 আজই যোগাযোগ করুন এবং আপনার ব্যবসার সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিন!
🌍 ভিজিট করুন: MahbubOsmane.com

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button